মোঃ রাকিব হাসান | ঢাকা: সারা বাংলাদেশের ২০১৩ সালে এস এস সি দেয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত একটি ফেসবুক গ্রুপের নাম এস এস সি ২০১৩ স্টুডেন্টস অব বাংলাদেশ। বর্তমানে এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৯৫ হাজার এর ও বেশী। পুরোনো অনেক বন্ধু কে অনেকেই খুঁজে পেয়েছেন এই গ্রুপের কল্যাণে।

একই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কুশলাদী বিনিময়, প্রতিভা বিকাশ, সাহায্য সহ বিভিন্ন কার্যক্রম সংগঠিত হতো এই গ্রুপ টি তে। কিন্তু এবার গ্রুপটিতে দুই প্রতারকের খবর পাওয়া গেছে।

ব্যাচের বেকার শিক্ষার্থীদের জব ইমোশন কে কাজে লাগিয়ে ভালোই প্রতারণার ছক একেছিলো এক প্রতারক চক্র। চাকুরী দেওয়ার নামে টাকা কালেকশন করতে চেয়েছিলো তারা। এই ছক বাস্তবায়ন হলে প্রায় ১১ লক্ষ টাকা আয় হতো তাদের।

চাকরি দেওয়ার নামে TKS Health Care নামে একটা প্রতিষ্ঠান ব্যাচ ১৩ গ্রুপের সদস্যদের থেকে দুইশত টাকা করে নিতে চেয়েছিলো। কিছুদিন আগে ২০১৩ ব্যাচের মুস্তাকিম নামে এক শিক্ষার্থী গ্রুপের এডমিন -মডারেটর প্যানেলে একটি প্রোজেক্ট জব এর প্রস্তাব নিয়ে আসে। যেখানে বলা হয় এন্টিজেন কিট দিয়ে করোনা টেস্ট সংশ্লিষ্ট কাজ করার জন্য সারা বাংলাদেশে তাদের জনবল লাগবে।

১৩ ব্যাচের জন্য কিছু করার ইচ্ছার জন্য ই এডমিন প্যানেল এক প্রজেক্ট টাকে ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করতে ইচ্ছা পোষণ করে। মজার ব্যাপার হলো প্রতারক চক্রের ঐ সদস্য এই প্রস্তাব টি বিশ্বাস করানোর জন্য নানারকম আবেগীয় অস্ত্র ব্যবহার করতেও দ্বিধা করেনি । এর মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলো মোস্তাকিম নামে একটি ছেলে যে আমাদের ব্যাচের অন্য শিক্ষার্থী তপুকে বলে “আমার ক্যান্সার, যে কোনো সময় মারা যেতে পারি এবং যাওয়ার আগে মানুষের জন্য ভালো কিছু করে যেতে চাই”।

গ্রুপের আরেক শিক্ষার্থী মিলন কে প্রোজেক্ট সম্পর্কিত সকল কাগজ পত্র দেখায় যা ছিলো বানোয়াট। সেই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে তপু ও মিলন অনেক পরিশ্রম করে সারা বাংলা প্রত্যেকটি আনাচে কানাচে থেকে বন্ধুদের যুক্ত করে প্রোজেক্ট রান করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো এবং জেলা প্রতিনিধি দের নিয়ে হোয়াটস এপ গ্রুপ করা হয় এবং সেখানে চাকরি প্রস্তাব কারী ব্যাচম্যাট মুস্তাকিম (যে নিজেকে TKS helth care এর এ জি এম দাবী করে আসছিলো) এর সাথে অনেকের অনেক ধরনের কথা হয় এবং প্রোজেক্ট সম্পর্কে নানা ধরনের তর্ক বিতর্ক হয়। এই তর্ক বিতর্ক হয় প্রতিটি নির্বাচিত প্রতিনিধি’র কাছ থেকে ২০০ টাকা করে কোম্পানি কে আগাম জমা দেয়ার ঘোষনা আসায়।

এই ঘোষনা মুস্তাকিম এবং তার কোম্পানি কর্তৃক আসে যার সাথে তপু,মিলন এবং অনেক জেলা প্রতিনিধিই দ্বীমত পোষণ করে আসছিলাম কারণ কাজ শুরুর পূর্বে কোনো প্রকার টাকা লাগবে না এমনটাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তারা। কিন্তু এর মধ্যেও অনেকেই চাকরির প্রত্যাশায় এই কোম্পানি কে ২০০ টাকা করে বিকাশ/রকেটে ডিপোজিট করে। টাকা পাঠানো বন্ধুদের সংখ্যা টা যদিও অনেক কম কিন্ত আমাদের এডমিনদের ঘোলাটে মনে হয় বিষয় টা। সে জায়গা থেকেই তারা মোস্তাকিম এর কাছ থেকে সরকার কর্তৃক অনুমতির পেপার দেখাতে বলে যার পরিপ্রেক্ষিতে মোস্তাকিম একটি ভুয়া ও বানোয়াট অনুমতি পত্র দেখায়।

তারপর তপু, মিলন এবং গ্রুপের এডমিন প্যানেল সহ অন্যান্য বন্ধু রা সেই ভুয়া অনুমোদন পত্র খতিয়ে দেখে এবং সবাইকে সতর্ক করার জন্য এসএমএস দেয়া হয় যেনো কেউ কোনো টাকা লেনদেন না করে এবং সেই সাথে বলা হয় পরবর্তী নির্দেশনা জানানো হবে। এত দিন চুপ থাকার কারণ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। অনেক বড় প্রতারক চক্র এর শিকার হয় তারা।

অবশেষে আইনের সহযোগিতা নেওয়ার জন্য উদ্যোগ নেয়া হয় এবং ৩৩৩ নাম্বার এ কল করে অভিযোগ করার চেষ্টায় ব্যার্থ হওয়া সত্বেও অনেক চেষ্টার পর প্রশাসনকে যেকোনো উপায়ে সম্পূর্ণ ঘটনা বিস্তারিত জানানো হয়। প্রশাসনকে সকল ধরনের তথ্য ও প্রমাণপত্র দিয়ে সহযোগিতা করে তপু ও মিলন এবং শেষ পর্যন্ত এডমিন প্যানেল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সফল হয়। এই আইনি সহযোগিতার ক্ষেত্রেও প্রশাসনে কাজ করে ১৩ ব্যাচের বন্ধুরাই সর্বোচ্চ সাহায্য করেছে। এখন মুস্তাকিম সহ এই অপরাধে যুক্ত আরো কিছু মানুষ কে দায়ী করে সংশ্লিষ্ট থানা মামলা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। বিষয় টি বাংলাদেশ পুলিস ও র‍্যাব প্রশাসন তদারকি করে।

গত ২১ তারিখ দিবাগত রাতে “মুস্তাকিম” কে আড়াইহাজার থানার তার নিজ বাসা থেকে র‍্যাব-১১ গ্রেফতার করে। বাকি আসামিদের গ্রেফতার প্রক্রিয়া চলমান। এ ব্যাপারে গ্রুপের এডমিন প্যানেল প্রশাসনকে সার্বিক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে।

মূলত গ্রুপের এডমিন প্যানেল এর বিচক্ষণতার জন্য চক্রের সকল ভুয়া কাগজ পত্র ধরা খায় এবং গ্রুপের এডমিন সহ গ্রুপের প্রশাসনে থাকা সদস্যদের সহযোগিতায় আসামীকে আটক করে র‍্যাব।

এই প্রসংগে গ্রুপের এডমিন বলেন “ব্যাচ ১৩ একটা আস্থার নাম। এইখানে কোনো অনাস্থার প্রশ্রয় কখনোই দেওয়া হবেনা। এটা একটা গ্রুপ না একটা পরিবার, যে পরিবার সারা বাংলাদেশ এ ছড়ানো। আমি বিলিভ করি ব্যাচ ১৩ এর জন্য আমাদের হাত এখন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।”